Singer
Fauzia Yasmin took music lessons from the musicians Ustaad Yousuf Khan Qureshi, and Ustaad Mohammad Fazlul Huq. She became a vocal artiste of the then Radio Pakistan in 1960. She took part in National Television programs since 1965. She used to perform Modern Bangla songs, Nazrul Sangeet (Songs created by Bangladesh National Poet Kazi Nazrul Islam), Folk and Rhyme songs along with Urdu Geet and Ghazals. She was also a playback singer and rendered voice in a number of films. She participated in musical conferences and soirees. She visited a number of countries including Pakistan, England, and Australia, and took part in music programs.
She, along with her husband Mobarak Hossain Khan, was the initiator of a popular TV musical program on NTV Channel (Bangladesh) called Bajo Ebong Bajao, which featured Sangat (co-performance) of Raag based Nazrul Sangeet with Sitar, Sarode, and other classical instruments that involved extensive planning and research.
Her famous songs include আজ পুতুলের গায়ে হলুদ (Aaj Putuler Gaye Holud), মন তো নয় আর আয়না (Mon to Noy Aar Ayna). There is a dedicated youtube channel for many of her songs, the link of which can be found here.
Significant Landmarks:
1959: Beginning of a successful career of live stage performances
1959: First time live singing in Theaters
1960: Debut in National Radio
1962: Debut in Gramophone recording company 'His Master's Voice'
1963: Debut in Playback in Movies
1965: Debut in national TV
Besides her illustrious musical career, she was also busy in the academic field. She took her degree in Master of Arts (M.A.) in Bangla Literature, from the University of Dhaka, Bangladesh, and joined in the teaching profession in T. and T. College, Motijheel, Dhaka, in 1971, until her voluntary retirement in 1999.
She also had a passion for cooking, and successfully conducted a cooking certificate course called 'Gharkannya' (ঘরকন্যা) as a home-based enterprise from 1979-1989.
মায়ের জীবন-কথা
তারিফ হায়াত খান
বড় ছেলে তারিফ হায়াত খান-এর লেখনীতে প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী ফওজিয়া ইয়াসমিনের জীবন কথা
ভূমিকা:
নানা লেখাপড়ায় ছিলেন চৌকশ। বিএ পাশ করে তৎকালীন বৃটিশ সরকারের বিসিএস (বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়ে সার্কেল অফিসার হিসাবে কলকাতায় কাজ শুরু করেন ১৯৩৮ সালে। সরকার থেকে বরাদ্দ ছিলো একটা খাকি হাফপ্যান্ট আর একটা নতুন সাইকেল। সাইকেলে করে সেই খাকি হাফপ্যান্ট পরে অফিসে যেতেন নানা। মেসে থাকতেন। একই মেসে থাকতেন আমার নানীর আপন মামা। নানা তার একজন পছন্দের লোক ছিলেন। নিজের ভাগ্নীর কথা চিন্তা করে নিজেই ঘটকালী করে নানাকে ভাগ্নীর সাথে বিয়ের প্রস্তাবটা দেন। নানার বাবা মারা গেছেন বহু আগেই। মা ছিলেন দেশের বাড়িতে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে নানা চতুর্থ। খুব কাছাকাছি মুরুব্বী মানে নানার বড় ভাই। তিনি উতসাহ দেখালেন। আমার মায়ের সেই নানার সাথে মা-র চাচা মেয়ে দেখতে আসলেন। তখন ছেলে সাথে যাওয়ার তেমন প্রচলন ছিলোনা। তবে আমার নানা বলে দিয়েছিলেন বড় ভাইয়ের পছন্দ হলে তার কোন আপত্তি থাকবেনা। নির্ধারিত দিনে তারা এসে গেলেন মায়ের নানার বাসায়। কথাবার্তা হলো, খাওয়া দাওয়া হলো। নানীর মামা মানে মায়ের সেই নানা জানিয়ে দিলেন মেয়ে ভালো গান গায়। শুনে নানার বড়ভাই খুব খুশী। তার বাসায়ও গান গাওয়ার পরিবেশ আছে। বললেন তাহলে একটা গান শুনি। মেয়ের তো অপরিচিত ছেলেদের সামনে আসার চল নাই। আমার নানী পাশের ঘর থেকেই হারমোনিয়াম বাজিয়ে একটা গান শোনালেন। নানার ভাই গান শুনে মহা খুশী। বিদায় নিতে উঠলেন। মায়ের নানা বললেন মেয়ের গায়ের রঙ, চেহারা বা এই সব বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলেন না? মায়ের চাচা বললেন, গান শুনেছি, তাতেই আমি রাজী। আর কিছু জানা লাগবে না। তবে সম্ভব হলে আরেকটা গান শুনে যেতে পারি। ভিতরে অনুরোধ চলে গেলো। নানী আরেকটা গান গেয়ে শোনালেন পাশের ঘর থেকে। খুশী মনে মা-র চাচা চলে গেলেন। নানাকে জানিয়ে দিলেন তিনি রাজী। নানাও রাজী। বিয়ে হয়ে গেলো আমার নানা এবং নানীর মধ্যে। আমার এই নানীই আমাদের দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে স্বনামধন্য ইয়াসমিন বোনদের রত্নগর্ভা মা। গান গেয়ে দেশে পরিচিতি ও সম্মান পেয়েছেন আমার বড় খালা ফরিদা ইয়াসমিন, আমার মা ফওজিয়া ইয়াসমিন, চতুর্থ বোন নীলুফার ইয়াসমিন, এবং সবচেয়ে ছোট আমাদের গানের জগতের কিংবদন্তী সাবিনা ইয়াসমিন। নানা লুতফর রহমান এবং নানী মওলুদা খাতুন।
প্রথম পর্ব:
বাল্যকাল
১৯৩৮ সালের এই ঘটনার সময় আমার নানীর বয়স ছিলো মাত্র চৌদ্দ কি পনেরো। এর কিছুদিন পরেই নানা-নানীর বিয়ে হয়ে যায়। বদলীর চাকরী হওয়ায় কলকাতা এবং কলকাতার আশেপাশে ১৯৩৮-১৯৪৭ পর্যন্ত এই নয় বছরে পাঁচটা বাসায় ছিলেন নানা-নানী। পার্ক সার্কাস এবং পার্ক স্ট্রীট কলকাতা শহরের ভিতরে হলেও শিউড়ী, ডায়মন্ড হারবার, আর বীরভূমে বদলির সময় সেই শহরগুলোতে মায়েদের যেতে হয়। ততদিনে নানার তিন সন্তানের জন্ম হয়ে গেছে। বিয়ের বছর দুইয়ের মধ্যেই জন্ম নেন প্রথম সন্তান আমার বড় খালা ফরিদা ইয়াসমিন, তার একবছর পরে দ্বিতীয় সন্তান আমার মা ফওজিয়া ইয়াসমিন, আর তার দুই বছর পরে তৃতীয় সন্তান আমার সেজ খালা নাজমা ইয়াসমিন। আমার মায়ের মতে নানার সংসারের সবচাইতে সুখের সময় এই নয়টা বছর, যাকে বলা যেতে পারে ‘গোল্ডেন পিরিয়ড’। ’৪৮ এর শুরুতে মা এবং বড় খালা প্রথমবারের মতো স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন। কোলকাতার রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল ইংলিশ মিডিয়াম কিন্ডারগার্টেনে শুরু হলো তাদের লেখাপড়া।
তবে এখানে উনারা মাত্র কয়েক মাসই পড়তে পেরেছিলেন। দেশ ভাগের পরপর চারিদিকেই একটা অস্থিরতা। নানাকে কলকাতার একজন ব্যবসায়ী বন্ধু ভয় দেখালো মুসলমান-হিন্দু সমস্যার জন্য চাকরী কি আর বেশীদিন থাকবে? আর থাকলেও সরকারী চাকরী করে কি করে তিন সন্তানের সংসার ভালোমত চালাবে, তার চেয়ে ব্যবসায়ে অনেক টাকা আসবে। কিভাবে কি হলো, নানা কনভিন্সড হয়ে গেলেন। যে মানুষটা লেখাপড়া ছাড়া আর কিছুই করতে মজা পান না, সরকারী সুন্দর একটা স্থায়ী চাকরীও জুটে গেছে, হোক সে খুব আহামরী কিছু উপার্জন হয়তো না, কিন্তু ভবিষ্যত যেখানে নিশ্চিত, সেই মানুষটি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করে ফেললেন একজন অসৎ লোকের ফাঁদে পড়ে। নানী অনেক বলেছিলেন, নানা শোনেননি। কি করে যেন মোহটা কাটাতে পারলেননা, নিজের যা আছে সম্পত্তি, সব বেচে ব্যবসার মূলধনের নামে নগদে সেই লোককে দিয়ে চাকরীর পদত্যাগপত্র জমা দিলেন। তখন ডেপুটি সেক্রেটারী যার কাছে পদত্যাগপত্র দিতে হবে উনি তারই আপন ভাই। উনি কিছুতেই পদত্যাগপত্র জমা নেবেননা। যদি নানার মত পরিবর্তন হয়। দুইদিন, তিনদিন চলে গেলো, নানাকে বোঝালেন এই ভুলটি যেন না করেন। তার মতো একজন স্কলারের ব্যবসায়ে যাওয়াটা বোকামী। কিন্তু নানাকে তখন গোয়ার্তুমীতে পেয়ে বসেছে। কারো কথা শুনলেন না। দেশ ভাগ হয়ে গেলো, আর নানার সেই পার্টনার সব টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে গেলো নানাকে একেবারে পথে বসিয়ে। সেদিন থেকে শুরু হলো নানার অনিশ্চিত জীবন।
ব্যবসার ব-ও যিনি বোঝেননা তার জন্য এটাই স্বাভাবিক পরিনতি ছিলো। কিন্তু সেই সুন্দর নিশ্চিন্তের চাকরী কি আর ফিরে পাওয়া যায়? আয়-রোজগার ছাড়া অবস্থায় বাসা ভাড়া কুলাতে না পেরে নানী এবং তিন মেয়েকে শ্বশুড়বাড়িতে রেখে নিজে মেসে থেকে চাকরীর চেষ্টা করবেন ঠিক করলেন। এমনিতে আমার নানী প্রতিবারই সন্তানসম্ভবা অবস্থায় শেষদিকে চলে যেতেন তার বাবা, অর্থাৎ আমার মায়ের নানার বাসায়। বাচ্চার জন্মের পর কয়েক মাস আমার নানী তার মায়ের বাসায় কাটিয়ে আবার কলকাতায় চলে যেতেন। তাই নানাবাড়ী আমার মা-খালার জন্য নতুন কিছু না। সেই বাসার বিরাট বড় আঙ্গিনায় ছড়ানো ছিটানো বিশাল বৈঠকখানা, অন্দরমহল, রান্নাঘর, বাথরুম। আনন্দের সাথেই তিনবোন মায়ের সাথে নানাবাড়ী থেকে যাবার প্রস্তুতি শুরু করলেন। কিন্তু ততদিনে পট পরিবর্তন হয়ে গেছে। দেশভাগের সময় যখন হিন্দু আর মুসলিম সম্পত্তি বদলা-বদলি হচ্ছিলো, আমার মায়ের নানা রাজশাহীতে একজন হিন্দুর সাথে সম্পত্তি বদলালেন। মোটামুটি ভালোই ঠকে গেলেন বলা চলে। সাইজে অর্ধেকেরও বেশী ছোট একটি বাসা পেলেন তারা। মাটির উঠোন বলতে কিছু নেই, যেটুকু আছে সেটুকু পাকা। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। তাড়াহুড়োর মধ্যে যতটুকু পাওয়া গেছে সেটাকেই ভাগ্য মেনে নিয়ে আম্মার নানা সেই বাসায় চলে এসেছিলেন। এরপর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নানা প্রাইভেট চাকরী পেয়ে বাসা ভাড়া করে আবার পরিবার কলকাতায় নিয়ে আসলেন। ভাবছেন সমস্যাতো মিটলো, আবার সুখের সংসার। কিন্তু সেটা হবার নয়। নানা চাকরী হারালেন কয়েক মাসের মধ্যেই। আবার পরিবার নানাবাড়ীতে পাঠানো, আবার উনার মেসে থাকা। নানা আবার চাকরী জোগাড় করলেন, আগের মতোই পরিবার আনলেন, এবং ঠিক আগের মতোই কিছুদিনের মধ্যেই চাকরী হারালেন। এরই মধ্যে এটা যেনো একটা প্যাটার্ণ হয়ে গেলো। নানা কোন চাকরীতেই বেশীদিন থাকতে পারছেন না দেশবিভাগ পরবর্তী নানা অস্থিরতার কারনে। কোন সময় কোম্পানী উঠে যায়, বা কখনো নানাই আর তাদের সাথে বনিবনা করতে পারেননা। কিন্তু নানা কেমন কেমন করে আবার চাকরী জুটাচ্ছেন, আবার পরিবার কলকাতায়, আবার চাকরী চলে যাচ্ছে, আবার মায়েরা নানাবাড়ি। কিন্তু এইভাবে কি অনির্দিষ্ট কাল ধরে চালানো যায়? এরই মধ্যে এসে গেছে চতুর্থ সন্তান, পরবর্তীতে স্বনামধন্য নজরুল ও উচ্চাংগ সংগীতশিল্পী নীলুফার ইয়াসমিন।
এদিকে এতবার নানাবাড়ী থাকার মধ্যে একটা জিনিষ পরিষ্কার হলো। দেখা গেলো বড় বোন বা সেজো বোনের চেয়ে আমার মায়ের ঘরের কাজের দিকে নেক একটু বেশী। নানার প্রিয়পাত্র হয়ে গেলেন আমার মা। এতটাই প্রিয় যে ১৯৪৯ সালের শেষে নানা যখন আরেকবারের মতো পরিবারকে কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় মা-কে নানা রেখে দিতে চাইলেন নিজের কাছে। তখন মায়ের মাত্র ক্লাস থ্রি-এর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। খেলার সাথী হিসেবে প্রায় সমবয়সী দুই খালাকে পেলেন, আমার ভুলু নানী আর টুলু নানী। এদের সাথে আগেও ছিলেন, কিন্তু তখন নিজের বোনেরাও থাকতো। এবার বোনেরা নাই, তাই খালারাই হয়ে গেলেন খেলার সঙ্গী।
ক্লাস ফোর শুরু হলো। ক্লাসের সময় ক্লাস, তারপর সন্ধ্যায় পড়াশোনা, খালাদের সাথে খেলা, নানার ফাই-ফরমাশ খাটা আর নানীকে সংসারের কাজে সাহায্য করা। এই শেষের কাজটা মায়ের এমনিতেই প্রিয় ছিলো, এখন আরো প্রিয় হয়ে উঠলো। আবার মা-ও হয়ে গেলেন নানা আর নানীর আরও প্রিয়। আজ জীবনের এতোটা পথ পাড়ি দিয়েও আমার মা এখনও প্রতিটি দিনের জীবনীশক্তি পান সংসারের কাজগুলো নিজের হাতে করেই।
‘৪৯ সালটা কি করে যেনো মোটামুটি ভালো কেটে গেলো নানার। নানীকে এর মধ্যে আর তার বাবার বাসায় আসতে হয়নি। কিন্তু বছর শেষের বার্ষিক পরীক্ষার পরপরই নানা চলে আসলেন মা-কে নিয়ে যেতে। আবার মা চলে আসলেন তার বাবামায়ের কাছে।
এদিকে নানা এতো রকম অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে থাকলেও এতোদিন পর্যন্ত কলকাতাতেই থেকে যাবার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। কিন্তু মেয়েরা বড় হচ্ছে, খরচ বাড়ছে, উনি বুঝতে পারলেন যে ঢাকাতেই শেষ পর্যন্ত যেতে হবে। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি নানা সপরিবারে ঢাকা চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। আমার নানীর বাবা তখনো রাজশাহীর মালোপাড়ার বাসাতে। তাকে না জানিয়েই ঢাকায় এসে পুরনো ঢাকার ‘ঢাকা বোর্ডিং’-এ উঠলেন। খবর কোনভাবে চলে গেছিলো নানীর ভাইয়ের কাছে। তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি থাকতে বোন-কে সপরিবারে কেন বোর্ডিং এ থাকতে হবে? তার ছোটো বোন (আমার নানী) যে ছিলেন তার খুবই প্রিয়। আমার নানীর বাবাও ল’ইয়ার ছিলেন। তিনি দীর্ঘজীবি ছিলেন। উনি বাংলা ১৩০০ সালে জন্মেছিলেন, তাই সালের সাথে সাথেই তাঁর বয়স চলতো। তবে তাঁর গল্প অন্যত্র হবে। আপাতত নানার গল্পে যাই। আমার সেই বড়োবাবা (নানীর বাবা)-র পরামর্শমতে আমার নানীর বড় এবং একমাত্র ভাই, উনি এসে নানা-নানীকে পুরানো ঢাকায় তার পাতলা খান লেনের বাসায় নিয়ে গেলেন। নানা তখন ছোট একটা চাকরী করছিলেন। সম্বন্ধীর বাসায় নানা সপরিবারে ছিলেন প্রায় এক বছর। এর পরপরই নানা আসলেই একটা ভালো চাকরী পেয়ে গেলেন এবার। চিত্তরঞ্জন কটন মিলে ওয়েলফেয়ার অফিসার। এটাকে বলা যেতে পারে ‘গোল্ডেন পিরিয়ড – ২’। ’৫১-’৫৪ এই চারটা বছর সুন্দর একটা সুস্থির জীবন আসলো। ফুলটাইমের পাশাপাশি নানা একটা পার্টটাইম চাকরীতেও ছিলেন। মায়ের জানামতে এই সময়েই নানা মেয়েদের জন্য বেশ কিছু গয়নাগাঁটি বানিয়ে দিতে পেরেছিলেন, যা তাঁরা সারাজীবনে যত্ন করে রেখেছিলেন।
কৈশোরঃ
মায়েরা তিনবোন ভর্তি হলেন নারীশিক্ষা মন্দির স্কুলে। বড়ো খালা আর মা একই ক্লাসে পড়তেন, এবং সেজো খালা এক ক্লাস নীচে। এখানে মায়ের ক্লাস ফাইভ, সিক্স, সেভেন আর এইট শেষ হলো। এবার গন্তব্য ঢাকেশ্বরী কটন মিলস গার্লস হাই স্কুলে। এটা শীতলক্ষ্যা নদীর ওপারে। এদিকে বাসা এপারে। নানা অফিস থেকে স্পেশাল লঞ্চ পেলেন। বাসার থেকে কয়েক কদম দূরেই ঘাট। সেখানেই সকালে ছোট্ট লঞ্চটা এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। মায়েরা তিনবোন লঞ্চে করে নদী পার হয়ে স্কুলে চলে যেতেন। আবার স্কুল শেষে সেই প্রাইভেট লঞ্চ আবার তাদেরকে নিয়ে বাসায় ফেরত দিয়ে যেতো। এটা মায়ের জীবনের অন্যতম সুন্দর স্মৃতি। এর মধ্যে আমার মায়েদের পঞ্চম এবং সবচেয়ে ছোট বোন দেশের স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের জন্ম হয়ে গেলো। ছোট দুইটা বোন মায়ের সাথেই সারাদিন কাটাতো, আর আম্মারা কাছাকাছি তিনবোন এক সঙ্গে চলতেন।
এসএসসিতে এসে পরীক্ষার সিট পড়লো নারায়ণগঞ্জেই মরগ্যান স্কুলে। এখান থেকেই ম্যাট্রিকুলেশনের ধাপ পেরোলেন মায়েরা বড় দুই বোন। ঐ যে তখন পুরো পরীক্ষা পাঁচ দিনে শেষ হয়ে যেতো, প্রতিটা দিন সকাল বিকাল দুটো করে পরপর পাঁচ দিন। সেটা ১৯৫৭ সাল। চিত্তরঞ্জন কটনমিলের চাকরীর কন্ট্র্যাক্ট শেষ করে নানা তখন নতুন চাকরীর সন্ধান করছেন। এদিকে মেয়েদের জন্য চলছে কলেজ খোঁজা। বাসার সবচেয়ে কাছে ছিলো সরকারী তোলারাম কলেজ, যদিও নদীর ওপারে। চাকরীর যেহেতু গ্যারান্টি পাওয়া খুব মুশকিল, বাসাও পাল্টাতে হতে পারে, তাই নানা প্রস্তাব দিলেন তোলারাম কলেজে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে থাকার। কিন্তু মায়েরা দুই বোন হোস্টেলের ঘোর বিরোধী। দুই বোন প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় প্ল্যান করেন কি করলে সবচেয়ে ভালো সমাধান পাওয়া যায়। একদিন তারা সত্যিই একটা পথ বের করলেন। মা চিন্তা করলেন নানাবাড়ীতে তো তার থাকার অভ্যাস আছেই, তাই উনি এইচএসসিটা উনাদের বাসায় থেকে করে ফেলতে পারেন। আর বড় খালা যেহেতু ঢাকাতেই থাকতে চান, তাই মায়ের বড় চাচা, যার কথা গল্পের শুরুতেই উল্লেখ করেছিলাম, তার বখশীবাজারের বাসায় থেকে পড়ালেখা করতে পারেন, তাহলে নানাকে চাকরীর জন্য বাসা বদলাতে হলেও মায়েদের দুই বোনের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়ালেখাটা নির্বিঘ্নে চলতে পারে। এই বখশীবাজারের চাচার এক ছেলে আবার মনজুর হাসান মিন্টো, যিনি প্রথমে গোলরক্ষক, এবং পরে রেডিও টেলিভিশনের ক্রীড়াভাষ্যকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এদিকে এই পরিকল্পনার কথা মায়েরা দুই বোন আমার নানা-নানীকে বলাতে উনারাও রাজী হয়ে গেলেন এই ভেবে যে উনারা বাসা বদল করলেও মেয়েদের লেখাপড়াটা ঠিকমতো চলতে পারবে। অতঃপর দুই বোন দুই জায়গায় চলে গেলেন। মা রাজশাহীতে যেটা এখন রাজশাহী উইমেন’স কলেজ নামে পরিচিত, সেখানে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলেন।
কলেজ জীবনঃ
এই সময়টাই ছিলো মায়েদের জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। মায়েরা এতোদিন বাসাতেই আমার নানীর সাথে গান প্র্যাকটিস করতেন। ঐ যে বলেছিলাম নানী খুব সুন্দর গান গাইতেন। আশেপাশের লোকেরা জানতো এরা সুন্দর গান গায়। তবে পরিচিতি ওখানেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু কলেজ জীবনে ঢোকার পর কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুই বোনই গাওয়া শুরু করাতে দেখা গেলো দুই জনই খুব কম সময়ের মধ্যেই কলেজের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছেন। একেবারেই ন্যচারাল ভয়েস ছিলো তাদের। যেটুকু শিখা মায়ের কাছেই।
পত্রপত্রিকা, চলচ্চিত্র, থিয়েটার, টিভি, রেডিও এবং এখনকার ইন্টারনেট, এগুলোই তো প্রচার মাধ্যম। রেডিও ছিলো তখন এক জনপ্রিয় প্রচার মাধ্যম। দেশবিভাগের আগে ১৯৩৮ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও চালু হয়। সেখানে ছিলো ভারতীয় শিল্পীদের আধিপত্য। দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ সালে অদ্ভূত এক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় দুইটি চরম ভিন্নধর্মী ভূ-সংস্কৃতির জাতিগোষ্ঠীকে একত্র করে পাকিস্তান গঠন করা হয়, যার পশ্চিম পাকিস্তান অংশ ছিলো এখনকার পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান ছিলো আমাদের বাংলাদেশ। তখন জন্ম হয় রেডিও পাকিস্তান। প্রায় ২,৫০০ কিমি দূরে অবস্থিত এই দুটো ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে এক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার মতো প্রহসনকে দূরে হটিয়ে অনেক দাম দিয়ে হলেও মাত্র চব্বিশ বছরেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যায় বাংলাদেশ। এই দুইটি অংশকে এক দেশ হিসাবে চিন্তা করা সব দিক দিয়েই অযৌক্তিক। পাকিস্তানীরাও সেটা জানতো। এবং জানতো বলেই প্রথম থেকেই বাংলাদেশীদের উপর সেই কলোনীয়াল শাসকদের মতোই আচরন শুরু করে। যে কোন বিষয়েই দুই অংশের পরিষ্কার বৈষম্য ছিলো। সাংস্কৃতিক অঙ্গনও এর বাইরে ছিলো না। তাই ১৯৪৭ সালে যখন রেডিও পাকিস্তান চালু হয়, বাংলাদেশী শিল্পীদের সেখানে অংশগ্রহণ খুবই সীমিত ছিলো। বাংলাদেশী শিল্পীদের অনেকে চেষ্টা করতেন কলকাতার আকাশবাণীতে বাংলা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে, কিন্ত সেখানেও ভারতীয় বাঙ্গালীদের সাথে অসম প্রতিযোগিতা ছিলো। তাই খুব কম বাংলাদেশীই সেখানে সফল হতেন। আমাদের শিল্পীদের অনেক সময় উর্দুতেও পরিবেশন করে সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করতে হতো, এবং যথারীতি সেখানেও তাদের ভালো সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কমই ছিলো। তবে বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পর কিছু পরিবর্তন আসতে থাকে আমাদের দেশের মধ্যে। বেশ উদ্দীপনা শুরু হয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ঐ সময়টাতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন জন্মাতে থাকে, যেগুলি আমাদের শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতো। সেটা এক নতুন রকমের জোয়ার। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আয়োজিত এই অনুষ্ঠানগুলো থেকেই বেরিয়ে আসতে থাকে নতুন নতুন প্রতিভা। মায়েরা দুই বোন ছাড়াও সমসাময়িক দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন আরও অনেক পরবর্তীতে নামকরা শিল্পী, তাদের মধ্যে আছেন আবদুল আলীম, আবদূর রউফ, ফেরদৌসী রহমান, মাহমুদুননবী, নীনা হামিদ, আব্দুল জব্বার প্রমুখ। যারা ঢাকায় থাকতেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এরা প্রায় নিয়মিতই একসঙ্গে গাইতেন। তখন যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিলো ট্রেন। বিভিন্ন জেলা শহরে অনুষ্ঠানগুলোতে শিল্পীরা সবাই একসঙ্গে যেতেন আবার একসঙ্গে ফিরতেন। সে এক ভিন্ন আবহ। শিল্পীদের মাঝে গড়ে উঠেছিলো এক বিরাট পারস্পরিক সমঝোতা আর নির্ভরতা।
আমার মা গান গেয়ে যে পরিচিতি পাওয়া শুরু করেন সেটা কিন্তু চলচ্চিত্র, টিভি বা রেডিওর মাধ্যমে না, এই সব লাইভ ‘ফাংশন’-এর মাধ্যমেই। হ্যাঁ, তখন এই অনুষ্ঠানগুলোকে ‘ফাংশন’-ই বলা হতো। বড় খালা-তো ঢাকায়ই থাকতেন, উনি ঢাকাতেই বেশীরভাগ অনুষ্ঠান করতেন এবং চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও গাইতেন। এদিকে বিভিন্ন ছুটিছাটায় মা-ও ঢাকাতে আসতেন। তখন ঢাকাতে উনিও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতেন। গানের সাথে কিছু পারিশ্রমিকও থাকতো। এইভাবেই দুই বোন স্বাধীনভাবে উপার্জনও শুরু করলেন। তাই মায়েরা দুই বোন বাবাকে প্রস্তাব দিলেন উনার চাকরীর যেমনই পরস্থিতি হোক, বাসা যেনো আর বদল না করতে হয়। এক বছরের মাথায় বড় খালা তার কোন এক সূত্র ধরে শান্তিবাগে একটা বাসা ভাড়া করে ফেললেন। নানা-নানী তাদের চার মেয়ে সহ সেই বাসায় গিয়ে উঠলেন। মা ঐ মুহুর্তে রাজশাহীতে। সেজোবোনের চিঠি পেয়ে উনি ঢাকা চলে আসলেন। ঢাকাতে মায়েদের দুই বোনের জনপ্রিয়তা এবং উপার্জন এতোটাই ভালো হতে থাকলো যে মা সিদ্ধান্ত নিলেন আর রাজশাহী যাবেন না এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাটা ঢাকা থেকেই দিবেন।
এই সময়টাতে মাা ঢাকা ভার্সিটির বিভিন্ন হলের প্রোগ্রামে গান গেয়ে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মূলত সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, জহুরুল হক হল, জগন্নাথ হল, তৎকালীন জিন্নাহ হল, এবং ঢাকা হলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মা ছিলেন একজন নিয়মিত মুখ। হলগুলির ‘এন্টারটেইনমেন্ট সেক্রেটারী’ পদে যারা ছিলো, তাদের কাজ ছিলো শিল্পী যোগাড় করা। আমার বাবা কিছুদিনের জন্য উনার হলে এই পদে ছিলেন। যদিও তখন তাদের মধ্যে পরিচয় ছিলো না, তবে বাবাও কিন্তু মা-কে নিমন্ত্রণ করে এনেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তবে সরাসরি যোগাযোগ হতোনা, যোগাযোগ হতো সঙ্গীত পরিচালনায় যিনি থাকতেন তাদের মারফত। বিভিন্ন হলে বিভিন্ন সময়ে বাবার মতো ‘এন্টারটেইনমেন্ট সেক্রেটারী’ পদে ছিলেন মাসুদ রানা খ্যাত কাজী আনোয়ার হোসেন, এবং ফজলুল হক। এয়া সবাই বিভিন্ন সময়ে মা-কে এসব প্রোগ্রামে ডেকেছেন। কালক্রমে এরা তিনজন ভায়রা ভাই হয়ে গিয়েছিলেন, এটাও একটা মজার ঘটনা। ফজলুল হক ১৯৬০ সালে বিয়ে করেন মায়েদের তৃতীয় বোন নাজমা ইয়াসমিনকে। কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬২ সালে বিয়ে করেন মায়ের বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিনকে, এবং বাবা-মায়ের বিয়ে হয় ১৯৬৩ সালে।
মায়ের মনে আছে এইসব প্রোগ্রামে যে পরিমান রোজগার হতো সেটা ছিলো তার প্রয়োজনের অনেক বেশী। দশ-বিশ টাকাই যেই সময় অনেক বেশী কিছু ছিলো, সেই সময় মায়ের ব্যাগে সবসময়ই দু’শো-তিনশো টাকা থাকতো। রোজগার হলেই বাসায় টাকা নিয়ে এসে একটা ট্রাঙ্কে তার মুখটা খুলে ঢুকিয়ে রেখে দিতেন। কালক্রমে তা উঁচু হতে থাকে। তখন আর কি করা, একটা ভারী কিছু দিয়ে চেপে রেখে দেয়া। একদিন নানা দেখে বললেন, টাকাগুলো এভাবে না রেখে ব্যাঙ্কে একাউন্ট খুলে ফেলতে। বুদ্ধিটা মনে ধরে মায়ের। তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (বর্তমানে সোনালী ব্যাঙ্ক)-এ গিয়ে একাউন্ট খুলতে গেলেন। সবই ঠিক আছে কিন্তু ম্যানেজার বললেন একাউন্ট তো খোলা যাবেনা, কারন একাউন্ট খুলতে সর্বনিম্ন আঠারো বছর বয়স হতে হবে। মায়ের যে তখনো আঠারোই হয়নি। ভাগ্যিস আরেকটা অপশন ছিলো। ম্যাট্রিক পাশ হলেও একাউন্ট খোলা যেতে পারে। সেই সার্টিফিকেট দেখিয়েই শেষ পর্যন্ত একাউন্টটা খোলা সম্ভব হয়েছিল। আর, টাকাগুলো দিয়ে মা কি করতেন? মূলত পড়ার খরচ চালানোর জন্য জমা রাখলেও সখের কিছু জিনিষ কেনার তো বাধা ছিলো না। সতেরো আঠারো বছরের মায়ের সরল স্বাধীন জীবনের একটা আনন্দ ছিলো নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে ইচ্ছামতো চকলেট কিনে খাওয়া।
দ্বিতীয় পর্ব:
(পূর্বকথনঃ আগের পর্বে ছিলো কি করে আমার মায়েরা বড়ো দুই বোন, মানে আমার বড়ো খালা ফরিদা ইয়াসমিন এবং আমার মা ফওজিয়া ইয়াসমিন ধীরে ধীরে পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছিলেন, এবং কেমন করে ’৪৭-এর দেশবিভাগের পরবর্তী অস্থিরতার মধ্য থেকে নানা-নানী এবং তাদের মেয়েরা তাদের সংসারটাকে আস্তে আস্তে স্থিতিশীল করে তুলছিলেন। বড়ো দুই বোনের পথ ধরেই তাদের দুই ছোট বোন নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন সঙ্গীতজগতে আসেন, এবং পরবর্তীতে বিশাল বেশী পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তবে এখন মায়ের শিল্পীজীবনের ব্যস্ত অধ্যায়গুলোর গল্প অল্প অল্প করে বলবো।)
ফাংশনে গানঃ
১৯৫৭ থেকে ১৯৬০, এই তিন বছরে আমার মা ফওজিয়া ইয়াসমিন বিভিন্ন কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আর বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন সঙ্গঠকদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে দেশে যথেষ্ট পরিচিতি অর্জন করেছিলেন। ’৬০ সালে রেডিওতে অভিষেক হওয়ার পর সেই পরিচিতি আরো দ্রুত ছড়িয়ে যায়। বিভিন্ন জেলায় হওয়া এই অনুষ্ঠানগুলো মা এবং সমসাময়িক শিল্পীদের এনে দেয় দেশব্যাপী খ্যাতি। এদের মধ্যে ছিলেন আবদুল আলীম, খন্দকার ফারুক আহমেদ, আনজুমান আরা বেগম, ফেরদৌসী রহমান, আনোয়ারউদ্দীন খান, লীনা নাজমুল, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, নীনা হামিদ, আব্দুর রউফ, মাহমুদুন্নবী, আব্দুল জব্বার, এরকম অনেকে। ষাট দশকের গোল্ডেন জেনারেশন এরা। ’৭১-এর স্বাধীনতার পর সত্তর দশকে এরাই ছিলেন দেশের সঙ্গীত জগতের পরিচিত মুখ। আমার মা ’৬০ থেকে ’৬৩, এই তিন বছর তার শিল্পীজীবনের চূড়ায় ছিলেন। ১৯৬৩ সালে বিয়ের পরে আর জেলায় জেলায় ঘুরে অনুষ্ঠান করতে যাননি। বিয়ের পরে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে যেটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয় সেইরকম আর কি। তবে এই নিয়ে মায়ের কোন আক্ষেপ নেই। সবসময়ই তিনি বলতেন সংসার সবার আগে। সংসারেই যে তার সর্বোচ্চ আগ্রহ ছিলো সেটাও আগের অংশেও বলেছি। তাই মোটামুটি ’৬৩-এর পর থেকেই খুব নিয়ন্ত্রিতভাবে তিনি সঙ্গীতে সময় দেয়া শুরু করেন। খুব বেছে বেছে অনুষ্ঠান নিতেন, ঘন ঘন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকতেন। বিয়ের পরপরই মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে যান। শিক্ষকতা পেশা হিসেবে নেবেন এটা বহুদিনের একটা লক্ষ্য ছিলো। সেই হিসেবে পড়ালেখাতেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে থাকেন সঙ্গীতের ক্যারিয়ারের একেবারে মধ্যগগনে থেকেও। তবে পেশাদারী সঙ্গীতজীবনের সেইসময়কার স্মৃতিগুলো এখনো জ্বলজ্বলে। এখনো আমরা যখন জানতে চাই, নির্ভুলভাবে সব ঘটনা স্মৃতির কোঠা থেকে বের করে আমাদের চমৎকৃত করে দেন।